শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটানোর জন্য করনীয় বিষয়

শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটানোর জন্য করনীয় বিষয়

আসসালামু আলাইকুম, ফ্রেন্ড’স আইটি পয়েন্ট (FriendsITpoint) এর পক্ষ থেকে  আপনাকে  জানাই স্বাগতম। আশাকরি আপনি ভালো আছেন।পূর্ববর্তী পোস্টে  আমরা সতেজ থাকার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছিলাম।  আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটানোর জন্য করনীয় বিষয়।

শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশ ঘটানোর জন্য করনীয় বিষয় এবং এর ইতিবাচক দিক বনাম নেতিবাচক দিকঃ

একটি শিশু জন্ম গ্রহন করার সাথে, এবং বড় হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক ভাবনা জরিত থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে , শিশুটির পরিবারের উপর নির্ভর করে শিশুটির মানসিক প্রক্রিয়ার ধরন , দৃষ্টিভঙ্গি ,চলাফেরার গতি ইত্যাদি । আপনার সজাগ দৃষ্টি শিশুটিকে এনে দিতে পারে সুন্দর ভবিষ্যৎ আর আপনার একটু অসচেতনা , হতে পারে শিশুটির জীবন অন্ধকারচ্ছন্ন ।

আজকের আলোচ্য বিষয় পরিবর্তনশীল মানসিক পক্রিয়াঃ-

  • কি কারনে শিশুর সুস্থ পরিবেশের প্রয়োজন ?
  • শিশুদের মানসিক পক্রিয়া গঠনে পরিবারের সদস্যদের কিরূপ ভূমিকা রয়েছে?
  •  শিশুদের মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারের উৎস সমূহ কি কি?
  • শিশুদের নেতিবাচক মানসিক প্রক্রিয়া দূর করার জন্য আমাদের কি কি করনীয় ?

“আজকের শিশু আগামি দিনের ভবিষ্যৎ” বর্তমান সময়ে সামাজিক অবক্ষয়য়ের অন্যতম প্রধান কারন শিশুদের যথাযথ নৈতিক শিক্ষা প্রদান না করা।


লেখাটি তাদের জন্য, যারা তাদের সন্তান কে নিয়ে দুশ্চিন্তা এবং হতাশা গ্রস্থ। আশা করছি এই লিখাটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা উপকৃত হবেন।

কি কারনে শিশুর সুস্থ পরিবেশের প্রয়োজন ?

একটি শিশু কন্যা হোক অথবা পুত্র, সন্তান জন্মের পর সেই সন্তানকে ঘিরে থাকে মা-বাবার অনেক স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষা। তবে সেই স্বপ্ন তখনই পূরন হওয়া সম্ভব, যখন শিশুটি বড় হওয়ার জন্য অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ভাবে সুস্থ পরিবেশ পায়।

শিশুদের মানসিক পক্রিয়া পরিবর্তনে পরিবারের সদস্যদের কীরূপ ভূমিকা রয়েছে? 

ঘরোয়া বা পারিবারিক সুস্থ পরিবেশের পাশাপাশি গু্রত্পূর্ণ ভাবে প্রয়োজন শিশুটির বাহ্যিক পরিবেশ ঠিকঠাক আছে কি না। একটি শিশু যখন বাড়ির চার দেয়ালে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে বড় হয় ততদিন সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে চলতে থাকে। কিন্তু সমস্যা টা হয় তখন, যখন শিশুটি বাহিরের জগতের হাতছানি পেতে থাকে ।

ভালো মন্দ উভয় বিষয় তাদের নজরে চলে আসে। এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের রাখতে হবে সজাগ দৃষ্টি। শিশুটির যত্ন নেওয়ার প্রক্রিয়াটি আরো এক ধাপ বাড়িয়ে তুলতে হবে।


যেভাবে যত্ন নেওয়া প্রয়োজনঃ-


 শিশুর সু- স্বাস্থের প্রতি বিশেষ ভাবে নজর রাখা।
 শিশুদের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা।
 শিশুদের সাথে বন্ধু সুলভ আচরন করা।
 তাদের সাথে সময় কাটানো।
 পড়াশুনা করার পাশাপাশি খেলাধুলা করার সুযোগ দেওয়া।
 সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করা।
 নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা।

শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটানোর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারের উৎস সমূহ কি কি ?

শিশুদের মনে যেভাবে নেতিবাচক মানসিক প্রক্রিয়ার জন্ম হয়ে থাকেঃ-

বিভিন্ন কারনে শিশুদের মনে নেতিবাচক ভাবনার জন্ম নিতে পারে। প্রধানত তিনটি কারনে শিশুদের মনে নেতিবাচক প্রক্রিয়া সৃষ্টি হয়, নিম্নে তা আলোচনা করা হলোঃ

১। শিশুরা খুবই অনুকরন প্রিয় হয়ে থাকে। যা তাদের ভালো লাগে , তা সহজেই নিজের মাঝে ধারন করে নেয়। সেক্ষেত্রে অন্যের কোন খারাপ আচরন ও তারা অনুকরনের মাধ্যমে চালিয়ে যাওয়া শুরু করে।

২। নোংরা পরিবেশের সংস্পর্শ। শিশুরা যখন বাহ্যিক পরিবেশে অন্যান্য শিশুদের সাথে মেলামেশা করে, তখন তারা পরিবেশ থেকে অনেক কিছু শিক্ষা লাভ করে। এছাড়া দিন বদলানোর সাথে সাথে তাদের মানসিক বিকাশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক উভয় বিষয়ে তারা সারা প্রদান করে থাকে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, আচরনের ৪০% তারা পরিবার থেকে এবং বাকি ৬০% তারা বাহ্যিক পরিবেশ থেকে আয়ত্ত করে নেয়। সেক্ষেত্রে আপনার আদরের শিশুটি একটু একটু করে নেতিবাচক বিষয়ের প্রতি ঝুকে পরা শুরু করে।

যেমনঃ- অকথ্য ভাষার ব্যবহার, বড় অথবা ছোটদের সম্মানের পার্থক্য বুঝতে না পারা। খিটখিটে মেজাজ, জেদ বেশি হওয়া,পড়শুনায় অমনোযোগী থাকা, ইত্যাদি।

৩। শিশুদের সাথে কঠোর আচরন করা থেকে বিরত থাকা, শিশুরা সেই জিনিস টা সহজে গ্রহন করে যা তাদেরকে আদরের সাথে প্রদান করা হয়। শিশুদেরকে প্রহার করা অথবা কঠোর আচরন করলে, তারা মনে মনে নেতিবাচক ধারনা পোষন করে বসে।

শিশুদের নেতিবাচক মানসিক প্রক্রিয়া দূর করার জন্য আমাদের কি কি করনীয়?

একটি শিশুর মানসিক প্রক্রিয়া গঠনের ক্ষেত্রে, পরিবারের সদস্যদের আচরন, শিশুদের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। তাই শিশুদের সাথে কথা বলার সময়, শাসন করার সময়, মনে রাখতে হবে উক্ত শিশু বিষয়টিকে কিভাবে গ্রহন করছে।
আপনি যেভাবে শাসন করছেন তা ফলপ্রসু হবে কি না।
 শিশুদের কোন নেতিবাচক আচরন নজরে আসলে তা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে। এর পাশাপাশি তাদের ভালোভাবে বোঝাতে হবে।
 বন্ধু সুলভ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, যেন আপনার আদেশ/উপদেশ তারা মাথা পেতে গ্রহন করে।
 শিশুদের শুপ্ত প্রতিভা জাগিয়ে তুলতে হবে।
 পড়াশুনার বিষয় গুলিকে আনন্দদায়ক ভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
 ভালো কাজে আগ্রহ বাড়ানোর জন্য উৎসাহ প্রদান করতে হবে।
 কোন কাজে অপারগতা প্রকাশ করলে, অনুপ্রেরনা যোগাতে হবে।
 শিশুটিকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা বাধ্যতা মূলক।
 তাদের বোঝাতে হবে জ্ঞাণ-ই সম্পদ ।

আচ্ছা একটু ভেবে দেখুন, আপনার শিশুটি ধিরে ধিরে বড় হওয়ার সাথে সাথে, তার আচরনের পরিবর্তন হতে থাকে, বিভিন্ন বস্তুর প্রতি আকর্ষিত হওয়ার ফলে বায়না ধরার চাহিদা বেড়ে যায়। যথাযথ সময়ে এই স্বভাবটি নিয়ন্ত্রন করতে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যৎ ফলাফল অনেক খারাপ হতে পারে।
আপনি যদি শিশুটির জৈবিক চাহিদা পূরনের পাশাপাশি অন্যান্য চাহিদা পূরনে সমর্থ না হন তাহলে শিশুটি হীনমন্যতায় ভোগে।
শৈশব কাল কেটে যাওয়ার পর শিশুটি কৈশোরে পদার্পণ করে। তারপর ও মা-বাবার কাছে সে শিশুই থেকে যায় । এক্ষেত্রে পরিবারের আপন জন ছাড়াও শিশুটি তার বন্ধু-বান্ধবের সাথে জরিয়ে পরে।
যদি সে সৎ সঙ্গ পেয়ে থাকে, তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ খুবই ভালো। আর যদি অসৎ সঙ্গ পেয়ে বসে, যেমনঃ মাদকাশক্তর মত বাজে সজ্ঞী, যার ভবিষ্যৎ পরিনতি মারাত্মক ভয়াভয়।

উপরোক্ত কথা গুলো বলার প্রধান কারন হলো , প্রত্যেক সঙ্গীই তার নিজ নিজ বন্ধুর আদর্শ গ্রহন করে থাকে।
এখন আমি বিশেষ ভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি অভিভাবকদের প্রতি। যারা আজ-কাল বলে, আপনাদের নিজেদের অবহেলার কারনে আপনার আদরের সন্তান কে অন্ধকারে ঠেলে দিবেন না।

ছোট দুটি উপদেশ এর মাধ্যমে আমি আমার সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষ করব।
১। মনে করুন, একটি ভালো আলুর সাথে অন্য একটি ভালো আলু একসাথে রাখাতে কোন অসুবিধা নেই। কারন তারা কেউ কারো জন্য ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু একটি খারাপ আলুর সাথে অন্য একটি ভালো আলু রেখে দিলে, খারাপ আলুর সংস্পর্শে এসে ভালো আলুটিও নষ্ট হয়ে যাবে। কারন নষ্ট আলুটির ক্ষমতা রয়েছে ভালো আলুটি কে পচিয়ে ফেলার। কিন্তু খারাপ আলুটির ক্ষমতা নেই ভালো আলুটি কে পূনরায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার।

যেমনটি মনে করা হয়ে থাকেঃ

একজন ভালো বন্ধু হয়তো খারাপ বন্ধুদের সাথে মিশে ভাবতে পারে তাদের ভালো করা সম্ভব। কিন্তু এই ধারনা সম্পূর্ণ কল্পনাতীত, খারাপ বন্ধুটিকে ভালো করতে গিয়ে সে নিজেই গোল্লায় যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

২। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন প্রাপ্ত বয়স হলে হয়তো শিশুটির এই স্বভাব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এই ধারনাটি করা সঠিক নয়।
হাল শক্ত করে বেধে সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখতে হয়, হাল ছেড়ে দিয়ে নয়। সময় বয়ে যাওয়ার পূর্বে আপনার শিশুটি কে আয়ত্তে নিয়ে আসুন। তা না হলে বেলা শেষে আপনার কিছুই করার থাকবেনা।
আশা করছি বিষয়টি বুঝতে আপনারা সক্ষম হয়েছেন।

লেখাটি আপনাদের উপকারে আসলে , তবেই আমি স্বার্থক। এখানেই আমি আমার সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষ করছি। পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *