গ্রাফিক্স ডিজাইন কি
গ্রাফিক্স শব্দটি এসেছে জার্মান শব্দ গ্রাফিক থেকে। যার অর্থ চিত্র বা রেখা। গ্রাফিক্স বলতে আর্ট,কল্পনা,অভিব্যক্তিপ্রকাশ যা দ্বারা গঠিত হয়। আর এটি হল দৃশ্যমান বিষয় ও বস্তু। যা লাইন,শেপ,টেকচার,টাইপোগ্রাফিএর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। আর অন্যদিকে ডিজাইন হল কোনকিছু সৃষ্টি করার পূর্বে এটার কার্যাবলী বা চেহারা কেমন হবে, সেটা ঠিক করা। এটি সমস্যা সমাধান,চিন্তা,বাস্তবতা এই তিনটির সমন্বয়।
গ্রাফিক্স ডিজাইনঃ গ্রাফিক্স অর্থ চিত্র এবং ডিজাইন অর্থ নকশা। সুতরাং, গ্রাফিক্স ডিজাইন হল চিত্রের মাধ্যমে নকশা তৈরির একটি প্রক্রিয়া। আবার ড্রইং, ইমেজ বা অক্ষর শিল্পই গ্রাফিক্স ডিজাইন। গ্রাফিক্স ডিজাইন কোন আঁকানো নকশা নয়, সাজানো কোন বস্তু নয়, নয় কোন কল্পনার ছবি। যখন কোন সমস্যার সমাধানে সুনির্দিষ্ট চিন্তা চেতনার দ্বারা কল্পনাকে একটি চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়, তখন একে গ্রাফিক্স ডিজাইন বলা হবে।
আসুন আপনার প্রশ্নের উত্তর দেই, গ্রাফিক্স ডিজাইন হল কোন সমস্যা সমাধানের জন্য নির্দিষ্ট কিছু ধাপ অনুসরণ। যা সুনির্দিষ্ট চিন্তা চেতনার দ্বারা কল্পনাকে একটি চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
উদাহরনঃ আমার একটি বিজনেস কার্ড লাগবে যার মধ্যে আমার লোগো, আমার ঠিকানা, আমার অফিস ঠিকানা ইত্যাদি থাকবে। আমি আমার ব্রান্ডকে বিজনেস কার্ডের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে চাই।
এবার যেটা আপনাকে করতে হবে, আপনাকে তার ব্র্যান্ড নিয়ে পড়তে হবে। তার ব্যবস্যা কোথায় এবং কাদের নিয়ে তা জানতে হবে। সুতরাং সব কিছু রিসার্চের মাধ্যমে আপনাকে তার বিজনেস কার্ড ডিজাইন করতে হবে। এখানে আপনাকে সুনির্দিষ্ট চিন্তার সাথে নির্দিষ্ট কিছু ধাপ অনুসরন করে কাজটি সম্পন্ন করতে হচ্ছে। এটাই মুলত গ্রাফিক্স ডিজাইন ।
অন্যদিকে, আপনাকে কেউ বিজনেস কার্ড ডিজাইন করতে বললো, আপনি উরাধুরা কিছু সেপ আর কালারে ভরে নাম এড্রেস বসিয়ে দিলেন। এটি যদিও বিজনেস কার্ড ডিজাইন তবে এটি শুধুমাত্র ডিজাইন, কারণ এর মধ্যে আপনার সুনির্দিষ্ট চিন্তার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের প্রতিফলন ঘটে নি।
না, আপনি আবারো ভুল করছেন। গ্রাফিক্স ডিজাইন হল কোন সমস্যা সমাধানের লক্ষে যেকোনো বিষয়ে পড়াশুনার মাধ্যমে তার গ্রাফিক্যাল চিত্রায়ন। যা লাইন, শেপ, টেকচারের মাধ্যমে কোন ব্যান্ডকে চিহ্নিত করে। আবার ডিজাইনের মধ্যে কনট্রাস্ট, হাইরেসি, এলাইনমেন্ট ইত্যাদির সমন্বয় থাকে।
কোন বিজনেস বা কোম্পানি তার প্রোডাক্টকে আকর্ষনীয় করতে পারে শুধুমাত্র গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে।
ফেসবুক এড, ব্যানার, পোস্টার, বিজনেস কার্ড, লোগো, ব্রসিউর, ফ্লায়ার, প্রোফাইল পিকচার, ইন্টেরিয়র ডিজাইন, প্যাকেট ডিজাইন, প্রোডাক্ট ডিজাইন ইত্যাদি সব কিছুই গ্রাফিক্স ডিজাইন। এছাড়া ইউএক্স/ ইউআই ডিজাইনও গ্রাফিক্স ডিজাইন।
একটি কোম্পানি বা বিজনেস তার প্রোডাক্টকে ফুটিয়ে তুলতে পারে শুধুমাত্র একজন ভালো ডিজাইনারের মাধ্যমে।
আরো একটা উদাহরন দেই- ধরুন আপনি ফেসবুকে সুন্দর একটা ডিজাইন আপলোড করলেন। যা অনেক শেপ আর কালারে ভরা আর আপনার কাছে এটিই সেরা ডিজাইন। তারপর আপনি আপনার ডিজাইনকে সুন্দর করে ফেসবুকে পোস্ট করলেন। দিন যায় রাত যায় আপনি নোটিফিকেশনের দিকে চেয়ে আছেন এই বুঝি অমুক আমার ডিজাইনের প্রশংসা করলো। এই বুঝি আমার ডিজাইনে ১০০ টা লাইক পরলো, এই বুঝি ৫০টা শেয়ার হলো। কিন্ত আপনাকে হতাশ করে আপনার ডিজাইনে ১০-২০ টা লাইক আসলো আর ঠিকমত ভিজিটরের কাছে পৌছালোই না ।
আপনি ঠিকই ধরেছেন, আপনি যেটাকে সুন্দর বলছেন ভিজিটর তার মধ্যে তার ইন্টারেস্ট খুজে পায় নি। কারন আপনি ডিজাইনটি করেছেন আপনার সন্তুষ্টির জন্য। যার মধ্যে ভিজিটরের আকর্ষন নেই।
অন্যদিকে শুধুমাত্র কয়েকটা সেপ আর অল্প কন্টেন্ট দ্বারা গঠিত একটি ডিজাইনে হাজার হাজার লাইক, কমেন্ট আর শেয়ার। অনেকগুলো শেপ ব্যবহার করে যে ডিজাইন ভিজিটরের কাছে পৌছাতে পারলো না কয়েকটা সেপ দ্বারা গড়া এই ডিজাইন কেমনে এত মানুষের কাছে পৌছালো। কারন, এটি ভিজিটরের ইন্টারেস্টকে কাজে লাগিয়ে রিসার্চের মাধ্যমে করা হয়েছে। যার মধ্যে ভিজিটর যেই জিনিসটি চায় তা বিদ্যমান। এখানে কয়েকটি শেপ দ্বারা গঠিত ডিজাইনই হল গ্রাফিক্স ডিজাইন। যা সুনির্দিষ্ট চিন্তাচেতনার দ্বারা ভিজিটর আকর্ষনকে টার্গেট করে করা হয়েছে।
চলুন উদাহরনের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি আরও ভালোভাবে ক্লিয়ার করি, ধরুন একটি ই-কমার্স কোম্পানি আপনার কাছে তার লোগো ডিজাইন করার জন্য কন্ট্রাক্ট করেছে। আপনি তার নাম ঠিকানা সব নিয়ে বললেন যে করে দিবেন। এরপর কেটে গেল ২-৩ দিন। আপনি ডিজাইন দেখানোর পর আপনার ক্লাইন্ট বললো আমার এটি পছন্দ না।
কিন্তু আপনি আপনার সেরাটা দিয়েই ডিজাইনটি করেছেন। শেপ, কালার এর সুন্দর কম্বিনেশন ও করেছেন। কিন্তু আপনি বাড়িঘর বা কিছুটা প্লাম্বিং এর আইকন ব্যবহারে আপনার ব্র্যান্ড কে ফুটিয়ে তুলতে পারেন নি। কিন্তু লোগো হচ্ছে বিজনেস আইডেন্টিফিকেশনের প্রথম পদক্ষেপ।
অপরদিকে, আরেক ব্যক্তি শুধুমাত্র কয়েকটা শেপ দিয়ে ই-কমার্স আইকনের সাথে কাস্টমার আর দোকানদারের মাঝে মেইলবন্ধন সৃষ্টির লক্ষে একটি সিম্পল ডিজাইন করলো। তার ডিজাইন দেখে কোম্পানি সেটি গ্রহনের সাথে তার কাজের অনেক প্রশংসা করলো।
হ্যা অবশ্যই ডিজাইন, তবে এটি গ্রাফিক্স ডিজাইন নয়, কারন এই ডিজাইন কোন সমস্যা সমাধানের লক্ষে সুনির্দিষ্ট ধাপ অনুসরন করে করা হয় নি। কিন্তু অপরদিকে কয়েকটি শেপ দিয়ে গঠিত ডিজাইনে এর পুরো প্রতিফলন ঘটেছে। উনি কোম্পানির সমস্ত রিকোয়ারমেন্ট নিয়ে কোম্পানি কি টাইপের, উনার ব্যবস্যা কাদের নিয়ে। বায়ার আর সেলারদের মধ্যে কি ধরনের রিলেশন রাখা দরকার আর কি ধরনের কালার ই-কমার্স বিজনেসের সাথে সম্পর্কিত।
দুজনের মধ্যে মূল পার্থক্য হল, রিসার্চে। অনেক শেপ ব্যবহারের মাধ্যমে উনি উনার যোগ্যতার প্রমান দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু উনি শুধুমাত্র একজন ডিজাইনার ই রয়ে গেলেন। এখানে যোগ্যতা সমান থাকা সত্যেও একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার আর অপরজন শুধুমাত্র ডিজাইনার।
সুতরাং কাজ জানলেই বা কঠিন কঠিন কাজগুলো কপি করতে পারলেই একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হওয়া যায় না। গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে হলে আপনার সুন্দর চিন্তার সাথে আপনার ভিজিটর চাহিদা, ক্লাইট চাহিদা সব বিবেচনা করা দরকার।
উপরোক্ত আলোচনায় আমরা গ্রাফিক্স ডিজাইন আর ডিজাইনার সম্পর্কে জানলাম, এরপর আমরা জানবো, কিভাবে একজন সফল গ্রাফিক্স ডিজাইনার হওয়া যায়? আমাদের এই আর্টিকেল বা ব্লগটি নিয়ে আপনার মূল্যবান কোন প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। আপনার গ্রাফিক্স ডিজাইন যাত্রা শুভ হউক। ধন্যবাদ
আসসালামুয়ালাইকুম। Blog Academy এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আশা করি আপনি ভালো আছেন। আমাদের আজকের আলোচনার…
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলি হল প্ল্যাটফর্ম যেখানে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের সেবা প্রস্তাব করতে পারে এবং ক্লায়েন্টরা তাদের…
ক্লায়েন্ট ম্যানেজমেন্ট ফ্রিল্যান্সারদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সঠিক কৌশল অবলম্বন করে ক্লায়েন্টের সাথে ভালো…
প্রেরণাদায়ক সাফল্যের গল্প ফ্রিল্যান্সারদের জন্য একটি শক্তিশালী উৎস হতে পারে। যেভাবে অনেক মানুষ তাদের পেশাগত…
ফ্রিল্যান্সারদের জন্য টাইম ম্যানেজমেন্ট টিপস—আপনার সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে আরও বেশি কাজ করুন এবং জীবন…
ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের কাজ প্রচার, নতুন ক্লায়েন্ট আকর্ষণ…
This website uses cookies.