বর্তমান সময়ে অনেক শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য বা স্বাভাবিক কাজকর্ম বাদ দিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করার স্বপ্ন দেখছে। অনলাইন প্লাটফর্ম এসব স্বপ্ন দেখা মানুষ গুলির জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। যদিও এক্ষেত্রে কাজের অনেক স্বাধীনতা আছে তার পর ও কিছু প্রতিবন্ধকতা অবশ্যই রয়েছে। অল্প কথায় বিষয়টি বোঝানো প্রায় অসম্ভব। তাই চলুন বিস্তারিত জানি।
অনলাইনে ক্যারিয়ার বলতে কি বোঝায়?
অনলাইন ক্যারিয়ার গড়ার অসুবিধা সমূহ কি কি?
১। প্রথম অসুবিধা হল অনলাইনে এত এত সেক্টর থাকতে কোন সেক্টর টা বেছে নিব আমার জন্য, এই সিদ্ধান্ত নিতেই অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়, যেটা ভালোভাবে বুঝার জন্য আগে এর উপর অনেক পড়ালেখা(অনলাইন ক্যারিয়ার বিষয়ক) করতে হয়। এবং না বুঝেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অনেকেই মাঝপথে গিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে হতাশায় ভুগে, ভাবতে থাকে যে হুদাই অনেক সময় নষ্ট করলাম, এরপর কেউ কেউ কাজ বন্ধ করে দেয়, কেউ কেউ আবার ফিরে আসে ভালো মানসিক শক্তি জোগার করে অথবা এই রকম কিছু।
২। এবার আসেন সেক্টর সিলেকশন করার পর যে সমস্যা টা হয় সেটা হল আমরা কাজ ভালো করে না শিখেই বিভিন্ন অনলাইন মার্কেট এ একাউন্ট খুলে ফেলি যা একেবারেই ভুল, এর ফলে যা হয় তা হলো ভালোভাবে কোন কাজ শিখা হয় না, দক্ষতা অর্জন ও হয় না, উন্নতি অনেক দূরে সরে যায়। সে জন্য আপনাকে প্রথমত প্রচুর সময় ব্যায় করতে হয় নিজে কাজ শেখার জন্য যেটা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না, অনেকেই কাজ শেখার ধৈর্য না থাকার কারনে কিছু করতে পারে না, হারিয়ে যায় কোনকিছু করার আগেই।
৩। অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়তে গিয়ে বিভিন্ন প্রতারনার শিকার হয় অনেকেই, সবাই শুধু চোখে সহজে টাকা ইনকাম দেখে কিন্তু এর পিছনে যে কি পরিমান কাট-খড় পোড়াতে হয় তা দেখার চেষ্টা করে না, যার ফলে আমরা ভেবে বসি যে, সে(এমন দক্ষ কেউ যে অনলাইনে ইনকাম করে) যদি বেশি কাজ করে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারে তাহলে আমি অতি অল্প কাজ শিখে অথবা না শিখেই আপাতত কিছু ইনকাম করতে পারবো, যেটা ভুল ধারনা। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা আপনাকে তাদের কোর্স করলেই ডলারপতি বানিয়ে দিবে, এই রকম সস্তা প্রলোভন দেখে আমরা হারিয়ে যাই টাকার ভুবনে।
এর মধ্যে আছে, কোন প্লাটফর্ম থেকে আয় করবো বুঝতে না পারা। অনেকেই ক্যাপচা, ভিডিও দেখে আর্ন, এপস নামিয়ে আর্ন এই টাইপের ফালতু কিছু “কাজ” এর পিছনে সময় দিয়ে কিছু ইনকাম করে। আর তাই দেখে নতুনদের মধ্যেও এই টাইপের ধারণা সৃষ্টি হয় যে, এভাবে ক্যাপচা, ভিডিও দেখেও আর্ন করা যায়। এই ক্ষেত্রে অনেকেই এভাবে ইনকাম করার জন্য ভাল সাইট খুঁজে, যেখান থেকে এই টাইপের স্কিল বিহীন কাজ করে অনলাইনে ক্যারিয়ার দাঁড় করাবে। সাময়িক কিছু দেখা গেলেও ভালো ক্যারিয়ার অসম্ভব।
৪। এবার সব প্লান ঠিক করলেন, বুঝলেন যে কি করতে হবে, কিভাবে করতে হবে তাও বুঝলেন কিন্তু বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অনেক ঝামেলায় পরতে হয়। যেমনঃ
ক) আপনার কাজের জন্য যে পরিমান সময় প্রয়োজন সেই সময় আপনি বের করতে পারেন না।
খ) কখনোই শুরু করা হয়ে উঠে না, বিভিন্ন ব্যস্ততায় পার হয়ে যায়।
গ) আপনার পরিবার থেকে অসম্মতি আসতে পারে, হয়তো আপনার পরিবার আপনাকে নিয়ে অন্য কিছু ভাবছে(ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংক্যার, শিক্ষক ইত্যাদি)। সেক্ষেত্রে আপনার ব্যাপার, আপনি কিভাবে কি করবেন।
কাজ শুরু করার পরে যে সমস্যা গুলো হতে পারেঃ
৫। আমাদের সমাজের বেশিরভাগ মানুষই জানে না কিংবা বুঝে না যে ঘরে বসে অথবা দেশে বসেই আন্তর্জাতিক মানের কাজ করা যায়, যার কারনে আপনার ক্যরিয়ার নিয়ে আপনি হয়তো চিন্তায় পরে যাবেন যে কিভাবে সমাজের মানুষকে বুঝাবেন আপনি কি করেন, এই জন্য সমাজের মানুষের বিভিন্ন অপ্রীতিকর কথাও শুনতে হতে পারে। বিয়ে করার ক্ষেত্রে গিয়ে সমস্যায় পরতে পারেন। যাই হোক এখন কিছুদিন হল এই ধরনের ব্যাপারে লোকজন একটু জানতে ও বুঝতে শুরু করেছে।
৬। যদিও আমরা প্রিয়জন, পরিবারের লোকজনদের সময় দেওয়ার জন্য অনলাইন ক্যারিয়ার বেছে নেই কিন্তু কাজ করার কারনে অথবা কাজের ব্যস্ততার কারনে দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে হয়। কাজের ব্যস্ততার কারনে মাঝে মাঝে আত্নীয়স্বজনদের সাথে খুব একটা যোগাযোগ করতে পারি না। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হতে পারার কারনে সামাজিক কাজ কর্ম থেকে বিছিন্ন হয়ে পরি। এর ফলে ধীরে ধীরে অসামাজিক খেতাব ধারণ করতে হয়। এর সমাধান আমরা পরবর্তীতে আলোচনা করব।
৭। জব সিকিউরিটি(যেমন কোন প্রতিষ্ঠানের চাকরি অথবা সরকারী চাকুরির মত) নামক কোন নিশ্চয়তা অনলাইনে আসলে তেমন থাকে না। গতানুগতিক চাকরির ক্ষেত্রে যেমন সারা মাস আর যাই হোক অন্তত মাস শেষে একটা নির্দিষ্ট বেতন পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে। কিন্তু অনলাইন ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে এই সুযোগ আসলে অনেক কম থাকে। তবে এই ক্ষেত্রে আপনি যদি আসলেই দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনার যা ইনকাম আসবে তাতেই মাস শেষের চিন্তা করতে হবে না, ইনশাল্লাহ।
৮। অনলাইন ক্যারিয়ারের অসুবিধার মধ্যে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিটা অনেক বেশী।
ক) বেশিরভাগ রাত জেগে কাজ করতে হতে পারে, সে জন্য স্বাস্থ্যগত অনেক সমস্যা তৈরি হয়।
খ) দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারের সামনে কাজ করার ফলে চোখের এবং কোমরের সমস্যা হতে পারে। এছাড়া ঘর থেকে কম বের হওয়ার কারনে শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাবে পরতে পারেন।
আমাদের এই পোস্ট টি যদি আপনার সামান্য তম উপকারে আসে তবে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না।ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের পুরো পোস্টটি পরার জন্য।