আসলামুআলাইকুম, আমারা আজকে আলোচনা করবো ওয়েব থ্রি কী? এই সম্পর্কে , Blog Academy তে লিখছি আমি কামরুজ্জামান রিফাত। বর্তমান সময় হচ্ছে প্রযুক্তি নির্ভর একটি সময়। প্রযুক্তির নিত্যনতুন আবিষ্কার আমাদের জীবনকে সহজ করে তুলেছে।
ওয়েব থ্রি হচ্ছে এমন একটি নেটওয়ার্ক সিস্টেম যা চালাতে কারো অনুমতির প্রয়োজন হয় না এবং এখানে যে কোন সার্ভিস সহজে অ্যাকসেস যোগ্য হয়। ওয়েব থ্রি আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের জগতকে সম্পন্ন হয়ে পাল্টে দিবে বলে সবাই ধারণা করছেন। ওয়েব থ্রি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য প্রসঙ্গটিকে সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা ভাবে তুলে ধরার চেস্টা করব ইনশাআল্লাহ। তাহলে চলুন আল্লাহর নামে শুরু করা যাক।
ওয়েব থ্রি কী?
ওয়েব থ্রি হলো ইন্টারনেটের একটি নতুন সংস্করন। গেভিন উড ওয়েব থ্রি-র ধারণা নিয়ে আসেন ২০১৪ সালে। আপনি যখন জিজ্ঞাসা করেন,ওয়েব থ্রি কী, এর উত্তর হল যে, এটি ইন্টারনেটের পরবর্তী রূপ,যা ওয়েব টু থেকে তৈরি হয়েছে। এটিকে কে বর্তমানে ইন্টারনেটের তৃতীয় প্রজন্ম ও বলা হয়ে থাকে। যেখানে ওয়েবসাইট এবং অ্যাপগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), মেশিন লার্নিং (ML), বিগ ডেটা, বিকেন্দ্রীভূত লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করতে সক্ষম হয়।
একটি নতুন ধরনের ইন্টারনেট জগতের কল্পনা করুন। যেখানে শুধুমাত্র আপনি যা ইনপুট করেন তা সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করবে না বরং আপনি যা প্রকাশ করেন তা প্রকৃতপক্ষে বুঝতে পারবে। তা আপনি লিখে, ভয়েসে বা অন্যান্য যে কোন মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করেন, যেখানে আপনি যে সমস্ত সামগ্রী ব্যবহার করেন তা আগের চেয়ে আপনার জন্য আরও উপযোগী হবে।
ওয়েব ৩.০ হল এমন একটি নাম যার মাধ্যমে কিছু প্রযুক্তিবিদরা একটি নতুন ধরণের ইন্টারনেট পরিষেবার ধারণা দিয়েছেন। যা বিকেন্দ্রীভূত ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে । যেমন, বিটকয়েন এবং ইথারের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে তৈরি শেয়ার্ড লেজার সিস্টেম। ইন্টারনেটের আগের সংস্করণগুলির মতো, ওয়েব থ্রি অতীতের প্রজন্মকে তৈরি করছে এবং এতে নতুন মাত্রা যোগ করছে। বিকেন্দ্রীকরণ, গোপনীয়তা, মেশিন লার্নিং এবং নিরাপত্তা প্রবণতা ওয়েব থ্রি অন্যতম গুনগত বৈশিষ্ট্য।
ইন্টারনেট ওয়েব বিকাশের ইতিহাস
বেশিরভাগ লোকই ওয়েবকে আধুনিক জীবনের একটি অবিচ্ছিন্ন স্তর বলে মনে করেন। এটি উদ্ভাবিত হয়েছিল এবং তখন থেকেই বিদ্যমান। যাই হোক, আজকে আমরা যে ওয়েবটি জানবো তা মূলত আমাদের কল্পনা থেকে একেবারেই আলাদা। প্রতিটি প্রযুক্তি ইন্টারনেট সহ প্রজন্মগত চক্রের মধ্য দিয়ে যায়। যখন আপগ্রেডের প্রয়োজন হয় এটি একটি নতুন প্রজন্মের সূচনাকে চিহ্নিত করে। আরও ভালভাবে বোঝার জন্য, ওয়েবের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসকে কিছু সময়ের মধ্যে ভেঙে ভেঙে আলোচনা করবো। ওয়েবের ধারনা পাই মূলত আমরা ওয়েব ১.0′ এবং ওয়েব ২.0′ এর সময়কাল হতেই।
ওয়েব ১.০ (1990-2004)
১৯৮৯ সালে, CERN, জেনেভাতে, টিম বার্নার্স-লি এমন প্রোটোকল তৈরি করেন যা পরবর্তীতে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে পরিণত হবে। তার চাওয়া এমন একটি বিকেন্দ্রীভূত প্রোটোকল তৈরি করবে, যা পৃথিবীর যে কোনও জায়গা থেকে তথ্য-আদান-প্রদানের অনুমতি প্রদান করবে।
বার্নার্স-লির হাতেই ওয়েবের সৃষ্টির প্রথম সূচনা, যা এখন ‘ওয়েব 1.0’ নামে পরিচিত,মোটামুটিভাবে ১৯৯০ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে এটি ঘটেছিল। ওয়েব ১.০ কোম্পানির মালিকানাধীন স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট।
এটি শুধুমাত্র বিভিন্ন লেখকদের কনটেন্ট বা টেক্সট লিখা বা পড়ার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ওই ওয়েব ১.০ কে ইন্টারনেট এর মূল ভিত্তি হিসেবে ধারণা করা হয়। ওয়েব ১.০ মূলত html পেজ গুলো ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল। যেগুলোতে শুধুমাত্র তথ্য প্রদর্শন করার ক্ষমতা রয়েছে কিন্তু ব্যবহারকারীর তথ্য পরিবর্তন করার কোনো উপায় ছিলোনা।
ওয়েব ২.০: (২০০৪-এখন)
১৯৯০ সালের শেষের দিকে ওয়েব ইন্টারেক্টিভ ইন্টারনেটের দিকে স্থানান্তরিত হতে শুরু করে। এই সময় কালকেই ওয়েব 2.0 এর সময় বলা হয়। ওয়েব ২.০ ব্যবহার করে ২০০৪ সালে বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম সমূহ জনপ্রিয় হতে শুরু হয়েছে। শুধুমাত্র বিভিন্ন কনটেন্ট বা টেক্সট পড়ার পরিবর্তে, ওয়েবটি লিখার সাথে ছবি, ভিডিও দেখার জন্য উপযোগী করে নতুন ভাবে ওয়েব 1.0 হতে একটু পরিবর্তন করে তৈরি করা হয়। ওয়েব ২.০সাথে এর ব্যবহারকারীরা সার্ভার প্রসেসিং,ডেটাবেজ, ফর্ম এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়েবসাইট প্রবেশ করে করতে পারে। ওয়েব ২.০ নিয়ন্ত্রণ করে মূলত বিভিন্ন নন গভর্নমেন্ট কোম্পানি সমুহ।
ওয়েব ৩.০:
Ethereum-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা গেভিন উড ২০১৪ সালে Ethereum চালু হওয়ার পরপরই ‘ ওয়েব ৩.০’ ভিত্তিটি তৈরি করেন। এই ‘ওয়েব ‘ ভিত্তির মাধ্যমে গ্যাভিন এমন একটি বড় সমস্যার সমাধান করেছেন। ওয়েব পরিচালনা করার জন্য খুব বেশি বিশ্বাসের প্রয়োজন। ওয়েব ৩.০’ ব্যবহার করে আপনি আপনার সকল ডেটা সমুহ বিশ্বাসের সাথে নিজে নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন। এটি সকল কাজ করবে ব্লকচেইন প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এর মাধমে। এতে আপনার সকল ডেটা সমুহ ওয়েব 2.0 থেকে বেশি নিরাপদ থাকবে। কারন আপনার ডেটার অ্যাক্সেস শুধুমাত্র আপনার কাছেই থাকবে অন্য কোন কোম্পানি যেমন, Facebook , twitter,google,instagram ইত্যাদি কারো কাছে যাবেনা।
ওয়েব থ্রি উদাহরণ
বর্তমানে অনেক ওয়েব থ্রি উদাহরণ তৈরি হয়েছে এবং এর নেটওয়ার্ক বিশ্বব্যাপী সমৃদ্ধ হয়েছে ৷ জনপ্রিয় ওয়েব থ্রি নেটওয়ার্কের মধ্যে রয়েছে Ethereum, Solana, Polygon এবং Cosmos । কিছু জনপ্রিয় ওয়েব থ্রি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে রয়েছে OpenSea, Coinbase, Ledger এবং MetaMask। এই নেটওয়ার্ক এবং প্ল্যাটফর্মগুলির মধ্যে অনেকগুলি এনএফটি বা বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সি বিক্রি করে। Apple Siri, Alexa, Google Assistant, ইত্যাদিকে ওয়েব 3.0-এর প্রাথমিক উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
ওয়েব থ্রি কিভাবে কাজ করে?
আমরা নিয়মিত Google, YouTube, বা Facebook ব্যবহার করছি। এবং যখনই আমরা এই ধরনের একটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করি এই প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো আমাদের ডেটা সংরক্ষণ করে এবং মালিকানা প্রদান করে থাকে। ওয়েব থ্রি তে, ব্যবহারকারীরা তাদের ক্রিপ্টো ওয়ালেটে তাদের ডেটা সংরক্ষণ করতে পারে এবং তাদের ওয়ালেটের মাধ্যমে ওয়েবে অ্যাপ ব্যবহার করতে পারে।
যখন তারা তা করবে, তাদের কোন ব্যক্তিগত ডেটা ইন্টারনেটে কোথাও সংরক্ষণ করতে হবে না। এবং তারা লগ অফ করলে তাদের ডেটা সরিয়ে ফেলবে। যেহেতু তারা নিজেরাই তাদের ডেটার মালিক, এটি কোনও প্রযুক্তি সংস্থা নিয়ন্ত্রিন করবে না এবং এর ব্যবহারকারীরা এটিকে ব্যবহার করবেন কিনা তা সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারেন।
ক্রিপ্টো ওয়ালেট ব্যবহারকারীদের পরিচয় হবে, কিন্তু এটি তাদের আসল পরিচয় হবে না। এর মানে হল যে কেউ আপনার ওয়ালেটের কার্যকলাপ দেখলেও তারা জানবে না যে আপনি ওয়ালেটের মালিক ৷ আপনার ব্যক্তিগত তথ্য গোপন থাকবে।
শেষ কথা
পরিশেষে, বলতে পারি ইন্টারনেটের নতুন নতুন আবিষ্কার আমাদের নিত্যদিনের জীবনধারণের গতিবিধি পরিবর্তন করেছে । এবং আমাদের সবকিছু সহজলভ্য করে তুলেছে। এখন ইন্টারনেটের ওয়েবের উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে পুরো পৃথিবী। এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা ওয়েব থ্রি কী?, ওয়েব থ্রি উদাহরণ , কিভাবে কাজ করে? এবং ইন্টারনেট ওয়েব বিকাশের ইতিহাস, সম্পর্কে যথাযথ ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি , যা আপনাদের উপকারে আসবে।