আসলামুআলাইকুম , Blog Academy এর পক্ষ হতে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়: তথ্য প্রযুক্তি কি ও বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি, আলোচনা করছি আমি কামরুজ্জামান রিফাত। তো চলুন এবার শুরু করি।
তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকাঃ
আধুনিক সভ্যতার এই বিশ্বায়নের যুগে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার সর্বত্র। শিল্প বিপ্লবের পর তথ্যপ্রযুক্তিতে দ্রুত উন্নয়ন লাভ পৃথিবীতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা । তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অনন্য উন্নতির ফলে গোটা বিশ্ব আজ গ্লোবাল ভিলেজে রূপান্তরিত হয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তি দূরত্ব কে কমিয়ে সহজলভ্য করেছে সব কিছু, অপরিচিত কে করেছে পরিচিত, আর অসাধ্যকে সাধন করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বের সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মূল হাতিয়ার।
যে জাতি তথ্যপ্রযুক্তিতে যত বেশি দক্ষতা অর্জন করেছে, তাদের সার্বিক অবস্থা ঠিক তত টাই উন্নত হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্বজুড়ে নিজের অবস্থান পরিপক্ক করতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই। আর এই একবিংশ শতাব্দীর সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ দুইটিই আবর্তিত হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে।
তথ্য প্রযুক্তি কি?
কম্পিউটার এবং টেলিযোগাযোগ মাধ্যমে সকল প্রকার তথ্য সংগ্রহ, একত্রিকরন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, ব্যবস্থাপনা এবং বিতরণের জন্য ব্যবহৃত সকল প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিকে তথ্যপ্রযুক্তি বলা হয়। কম্পিউটিং, মাইক্রো ইলেকট্রনিক্স, টেলিকমিউনিকেশন ইত্যাদি তথ্যপ্রযুক্তির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত বিষয়গুলোর মধ্যে পরে।
ইতিহাসের পাতায় তথ্য প্রযুক্তি
ইতিহাসে তথ্য প্রযুক্তির অভাববোধ প্রথম অনুভূত হয় বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে সম্ভবত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাথমিক অবস্থায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকেই বিশ্বের আন্তর্জাতিক আর্থসামাজিক চেহারা দ্রুত পাল্টাতে শুরু করে।
নতুন নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে নিজের দেশের অবস্থান পরিপক্ক করার উদ্দেশ্যে বিশ্বজুড়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণার ঢল নেমে যায়। এরপর বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বিশ্বজুড়ে আরো একবার দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শুরু হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেই সবার প্রথম তথ্য প্রযুক্তির স্বল্প পরিমান ব্যবহার হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে পৃথিবীর চিত্র আরো দ্রুত পাল্টে যেতে শুরু করে ।
এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও। এরপর ৭০ দশকে পৃথিবীতে ইন্টারনেট এর আগমন ঘটলে তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে , সেই সময় থেকে অতি দ্রুত পৃথিবীতে তথ্য প্রযুক্তির রূপ রেখা পরিবর্তন হতে থাকে।
আধুনিক প্রযুক্তি সূচনাকালঃ
উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের শিল্প বিপ্লবের সময় কালকে এ সময়ের প্রযুক্তির জন্মলগ্ন বলে মনে করা হয়। আর এই সময় ধরেই জীবনের প্রায় সকল ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপক ভাবে শুরু হয়।
তবে এই সময়ে পৃথিবীর জনসংখ্যা এবং জীবনযাত্রার জটিলতা অল্প থাকার জন্য তথ্য প্রযুক্তির গুরুত্ব তেমনভাবে মানুষের কাছে প্রয়োজন মনে হয়নি। কিন্তু সময় যত বহমান হয়েছে ততই তথ্য ও প্রযুক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষ সচেতন হতে শুরু করেছে ।
বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই মোটামুটি বিশ্ব জুড়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা ভালভাবে উপলব্ধি করতে শুরু করে । প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে বর্তমান কালের আধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভব ঘটে।
দৈনন্দিন জীবনে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
তথ্য প্রযুক্তির কি প্রভাব এবং এর ব্যবহারের জন্য যে জীবনযাত্রার মান বেড়েছে তা এখন সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। যার ফলশ্রুতিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশে এখন অনেকটাই বেড়েছে। স্কুল ,কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিদিনেই কম্পিউটার ব্যবহারকারী সংখ্যা বাড়ছে। দেশে এখন কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, সফ্টওয়্যার, ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। সারা দেশে কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের শো-রুম রয়েছে সহস্রাধিক। ঢাকা শহরেই অনেক হার্ডওয়্যার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এবং সফ্টওয়্যার প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে।
দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার কি?
- ঘরে বসেই খুব সহজেই বিভিন্ন পরীক্ষার রেজাল্ট বা ফলাফল জেনে নেয়া যায় প্রযুক্তি (কম্পিউটার বা মোবাইল ) ব্যবহার করে অনলাইনের মাধ্যমে ।
- মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার ব্যবহার করে টাকা লেনদেন, মোবাইল রিচার্জ, বিদ্যূত বিল পরিশোধ, পানির বিল পরিশোধ ,ইন্টারনেট বিল পরিশোধ ইত্যাদি প্রদান করে ।
- ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে ঘরে বসেই প্রায় সকল চাকরির আবেদন করা এবং সকল প্রকার চাকরির পরীক্ষার প্রবেশপত্র অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নেওয়া যায়।
- অনলাইনের টিকেটিং সিস্টেম ব্যাবহার করে পরিবহণ মালিকগণ বা যাত্রীগণ তাদের বাস, ট্রেন বা প্লেনের টিকিট বাস টার্মিনাল বা রেল স্টেশনে না গিয়েই সহজে ক্রয় বা বিক্রয় করে থাকে ।
- ইন্টারনেটের সাহায্যে প্রায় সব প্রকার দৈনিক পত্রিকা (যেমনঃ প্রথম আলো, সমকাল, কালের কণ্ঠ) পাঠ করা যায় ।
- ইন্টারনেটের বাবহারের মাধ্যমে ঘরে বসেই নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্য থেকে শুরু করে রান্না করা খাবার পর্যন্ত বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটে অর্ডার করা যায়।
- যে কোন ধরণের বই ই -বুক থেকে পড়ার সুবিধা রয়েছে।
- ইন্টারনেটের বাবহারের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ডাক্তার এর পরামর্শ বা সেবা ঘরে বসেই নিতে পারি সহজে ।
- কৃষি উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ সকল তথ্য ঘরে বসেই ইন্টারনেটের কল্যাণে জেনে নিতে পারি ।
- ইউটিউব এবং আরও বিভিন্ন ওয়েবসাইটের কল্যাণে ঘরে বসেই বিভিন্ন বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান (যেমনঃ সিনেমা, নাটক, ওয়েব সিরিজ ইত্যাদি) উপভোগ করতে পারি।
সভ্যতার বিকাশে তথ্য প্রযুক্তি কি ভুমিকা রাখে?
মানুষের জীবনমানের অগ্রগতি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই গড়ে উঠেছে আজকের আধুনিক সভ্যতা। সভ্যতার অগ্রযাত্রার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তথ্যপ্রযুক্তি। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার মানুষকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন প্রদান করেছে ।
বিজ্ঞানের সব রকম চেষ্টা, চিন্তা, আবিষ্কার তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের মানুষের কাছে অতি দ্রুত পৌছে যাচ্ছে। আধুনিক যুগে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিবিদ্যা একই স্রোতধারায় আবর্তিত হচ্ছে। প্রযুক্তিবিদ্যার কারিগরি জ্ঞান মানুষকে নানান ভাবে সাহায্য করে।
প্রযুক্তিবিদ্যাই সভ্যতাকে আধুনিক করে তুলেছে। মানুষের যখন যান্ত্রিক শক্তি সম্পর্কে ধারণা ছিল না তখন জীবনসংগ্রামে মানুষ শ্রমকেই আশ্রয় করেছিল। পরবর্তীতে তা পরিবর্তিত হয়ে প্রযুক্তির আওতায় আসে।
যােগাযােগ ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির অবদান
আদিকাল থেকেই মানুষ একজন অন্যজনের সাথে, এক দেশ অন্য দেশের সাথে যােগাযােগ করতে চেয়েছে। বিভিন্ন সময় তারা বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। কবি কালিদাস মেঘদূতের মাধ্যমে তাঁর প্রিয়ার কাছে প্রণয়বার্তা পাঠানাের কথা বলেছেন।
ক্রমান্বয়ে চিঠিপত্রাদির প্রচলন হয়। সম্ভবত খ্রিষ্টপূর্ব ৩২২ অব্দে মৌর্যের রাজত্বকাল থেকে প্রশিক্ষিত পায়রা সংবাদ বহন করত। পরে ঘােড়া, রাজদূত, রানার এ কাজ করত। চিঠি মানুষের কাছে প্রামাণ্য দলিল বিধায় এখনও টিকে আছে।
একসময় আধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে ছিল টেলিগ্রাফ। বর্তমানে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় যােগাযােগের জন্য এসেছে টেলিফোন, মােবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ই-মেইল।
ফেসবুকের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে টেক্সট পাঠিয়ে যােগাযােগ করা যায়। বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে পৃথিবীর এক প্রান্তের মানুষের সাথে অন্য প্রান্তের মানুষের যােগাযােগ রক্ষার জন্য ফোন করা যায়, কম্পিউটারে বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে বক্তা ও শ্রোতার ছবি এবং তার অবস্থান, মুভমেন্ট ইত্যাদি দেখা যায়। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যােগাযােগ মাধ্যম হচ্ছে ইন্টারনেট।
পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে আছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ অনলাইনে বই পড়ে, দেশ-বিদেশের সাহিত্য সংস্কৃতির সাথে জ্ঞানের যােগাযােগ রক্ষা করছে। ই-মেইলের মাধ্যমে চিঠিপত্র আদান-প্রদান ও দরকারি ফাইল প্রেরণ করা যায়।
শিক্ষা ও চিকিৎসাক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি
তথ্য প্রযুক্তি চিকিৎসাক্ষেত্রে ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে । তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যাবহার করে নানান ধরনের নিত্য নতুন আবিষ্কার এ সময়ের চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।
উদাহরণ হিসেবে সর্বপ্রথম বলা যেতে পারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবোটিক্স সংক্রান্ত আবিষ্কার ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে এইগুলোর ব্যাবহার শুরু করা।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবোটিক্স প্রয়োগ করার মাধ্যমে নানান জটিল রোগ নির্ণয় করে সেই রোগের সমাধান খুব সহজে, দ্রুতগতিতে এবং নির্ভুল ভাবে প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।
এছাড়া তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যাবহার করে প্রতি দিনের নিত্য নতুন আবিষ্কারগুলো বর্তমান শিক্ষাব্যাবস্তাকেও বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। শিক্ষাক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর প্রয়োগ করার ফলে বর্তমান শিক্ষাকে অনেক বেশি বাস্তবমুখী এবং যথাযথ করে তোলা সম্ভব হয়েছে।
অল্প সময়ের মাঝে প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি, রােগনির্ণয় কৌশল এবং নতুন রােগ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে সাধারণ মানুষ খুব সহজে ধারণা লাভ করছে ।
তথ্যপ্রযুক্তি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সম্পর্কে তথ্য ও নির্দেশনা প্রদান করে। শিক্ষার বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রেডিও টেলিভিশনের মাধ্যমে নিয়মিত শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকাঃ
তথ্যপ্রযুক্তিকে মূলধন হিসেবে ব্যবহার করে এবং মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, ভারত, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। অথচ আমাদের বুদ্ধি কম থাকার জন্য আমরা তথ্যের সুপার হাইওয়ের সাথে আজ যুক্ত হতে পারি না আমরা । আবার ফাইবার অপটিকস ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছি আমরা বিভিন্ন সরকারি জতিলতার জন্য।
তাই আমাদের প্রচুর টাকা খরচ করে ব্যবহার করতে হয় ভি স্যাটের লাইন । তবে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তথ্যপ্রযুক্তি খাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিভিন্নভাবে অবদান রাখছে। দেশে কম্পিউটার সফ্টওয়্যার তৈরি বেশ বেড়েছে বাংলাদেশে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তথ্য প্রযুক্তি কি ধরনের ভুমিকা রাখে?
কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভুমিকা অপরিসীম। বাংলাদেশে বর্তমানে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, সফ্টওয়্যার, ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ সকল প্রতিষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান বাবস্থা করে দিতেছে । তারা সহজেই ভালো উপার্জন করে নিজেদের ভালো অবস্থা গড়ে তুলছে।
অনেকেই করছে ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং এবং নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ছে ঘরে বসে কাজ করে।
যদি ফিল্যান্সিং এর প্রতি আগ্রহী হোন তাহলে পড়তে পারেন বর্তমান প্রেক্ষাপটে ফ্রিল্যান্সিং বা অনলাইন ইনকামের ৭ টি জনপ্রিয় কাজ।
গবেষণা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকাঃ
আধুনিক যুগের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, বিশেষ করে বিভিন্ন ধরণের গবেষণা সংক্রান্ত ব্যাপারে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যাবহার, গবেষণার পুড়নো নিয়ম ও সমীকরণগুলিকে অতি দ্রুত পরিবর্তন করে দিচ্ছে।
তথ্য প্রযুক্তির অকল্পনীয় উন্নতির ফলে জ্ঞান আহরনের জন্য এখন আর মাথার ঘাম পায়ে ফেলার প্রয়োজন হয় না। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘরে বসেই বিভিন্ন ধরণের বিশ্বমানের গবেষণাপত্র পড়ে ফেলা সম্ভব।
এছাড়াও গবেষণা সংক্রান্ত নানারকম বিষয় যেমন: আবহাওয়ার গতিবিধি নির্ণয়, জলবায়ু সম্পর্কে জানা , ভূ-প্রাকৃতিক বিষয়ে গবেষণা, বিভিন্ন জরিপ সংক্রান্ত গবেষণা ইত্যাদি কাজে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যাবহারের মাধ্যমে অত্যন্ত নির্ভুল ও সহজ ভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়।
সভ্যতার উন্নতির পূর্বশর্তই হলো উন্নত মানের গবেষণা। তাই বর্তমান গবেষণার পদ্ধতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে সহজ করে তুলে তথ্যপ্রযুক্তি আসলে পৃথিবীর উন্নতির ক্ষেত্রেই সহায়তা করছে।
বিনোদনের ক্ষেত্রে তথ্য ও প্রযুক্তিঃ
বিনােদনের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। রেডিও, টেলিভিশন, ডিভিডি, মােবাইল এখন বিনােদনের অন্যতম মাধ্যম। বর্তমানে প্রায় সকল মােবাইল সেটেই বিবিসিসহ দেশি-বিদেশি বহু রেডিও স্টেশন থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান শােনা যায়।
ছবি তােলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আদান প্রদান করে যায় । মেমােরি কার্ড ব্যবহার করে গান শুনা, ভিডিও দেখা যায়।ইন্টারনেট সংযােগ দিয়ে দেশ-বিদেশের তথ্যচিত্র ও বিনােদন উপভােগ করা যায়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিল্প সাহিত্য-সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময়তা সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যায়। এক কথায়, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ঘরে বসেই প্রয়ােজনীয় সব রকম আনন্দ বিনােদন পাওয়া যায়।
তথ্য প্রযুক্তি কি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে?
উত্তর হ্যা, তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে মানুষ নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বর্তমানে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলাের অপরের সাথে পারস্পরিক মধ্যে ক্ষতিকর মারণাস্ত্র ব্যবহার করছে;দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে হানাহানি বাড়ছে।
তথ্য প্রযুক্তি কে ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাইবার জনিত অপরাধ কর্মকাণ্ড গুলো হয়। কেউ কেউ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন অপসংস্কৃতি চর্চায় মেতে ওঠে, যা আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ক্ষতিকর।
কাজেই, তথ্য প্রযুক্তি কি এবং এর সঠিক ব্যাবহার জেনে ইন্টারনেটসহ অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তিকে ইতিবাচক অর্থে ব্যবহার করতে হবে। এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জনকল্যাণমূলক কাজে আত্মনিয়ােগ করতে হবে।
বাংলাদেশে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি বাস্তব প্রয়ােগঃ
- বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়ােগ ও চর্চার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে। সরকার প্রযুক্তিনির্ভর একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
- অনলাইনে বিভিন্ন সরকারি চাকরির আবেদন, শিক্ষাক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদন ফরম জমা দেওয়া, ফি জমাদান, বিভিন্ন পরীক্ষার ফল প্রকাশ, টেক্সস্ট বুক সফটকপির ব্যবস্থা, প্রভৃতি কাজ নির্ভুল ও সহজ ভাবে প্রযুক্তির মাধ্যমে করা হচ্ছে।
- ইতােমধ্যে দেশে ডিজিটাল ভূমি জরিপের কাজও শুরু হয়েছে। ই-কমার্স, ই-লার্নিং, ই-বুকিংয়ের পাশাপাশি ই-ভােটিং কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। দেশে প্রথম আইসিটি ইনকিউবেটর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
- এতে প্রায় ৭০ টির ও বেশি সেবাদাতা ও সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের এক হাজারের বেশি দক্ষ কর্মী এতে কাজ করছেন। বাংলাদেশের ঢাকার আগারগাঁওস্থ আইডিবি ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয় বিসিএস কম্পিউটার সিটি। সরকার ঢাকার অদূরে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আইটি প্রজেক্টের কাজ শুরু করেছে।
- রেল টিকিট, বিমান টিকেট, হোটেল বুকিং ছাড়াও বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাবহার চোখে পরার মতো।
তবে সত্য কথা বলতে আধুনিক বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে আছে তথ্য প্রযুক্তির দিক দিয়ে। যেমন ইন্টারনেট কানেকশন এর কথা যদি ধরা যায় তাহলে দেখা যাবে অন্যান্য দেশে যেখানে ইন্টারনেট স্পিড অনেক ভালো সেখানে অনেক দামেও আমরা ভালো গতির ইন্টারনেট পাই না।
আমার ধারনা মতে, তথ্য প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের অন্যান্য খাতের তুলনায় দুর্নিতি কম হয়। তবে ইদানীংকালে দুর্নিতী দেখা যাচ্ছে এক খাতেও, আর যদি এসব দুর্নিতীর মাত্রা চরমে পৌছায় তাহলে বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার থেকে অনেক পিছিয়ে পরবে।
উপসংহারঃ
পরিশেষে বলা যায় যে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিই বর্তমান বিশ্বে সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মূল হাতিয়ার। যে জাতি তথ্যপ্রযুক্তিতে যত বেশি দক্ষ, তাদের সার্বিক অবস্থাও তত বেশি উন্নত।
তাই তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও যুবদের বেকারত্ব দূর করার জন্য আমাদেরকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশে তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব ঘটানোর জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
সরকার, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সর্বস্তরের জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে খুব দ্রুত বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব পরিমণ্ডলে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় ও উজ্জ্বল করতে সক্ষম হবে।
এই আর্টিকেলটিতে তথ্য প্রযুক্তি কি ও বাংলাদেশ এর প্রেক্ষাপটে তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে যথাযথ বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আমাদের এই ব্লগ পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে।
যদি তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ এ বিষয় নিয়ে আপনাদের মূল্যবান কোন পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না।
ধন্যবাদ